সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগল বর্তমানে সবচাইতে বেশি ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয়। গুগলের এই জনপ্রিয়তার অন্যতম কারন হচ্ছে গুগলের বিশাল ডাটার সমুদ্র, এবং প্রয়োজন অনুসারে খুব অল্প সময়ে আমরা কাঙ্খিত ও উপযুক্ত ফলাফল পেয়ে থাকি। কিন্তু আমরা কি ভেবে দেখেছি, গুগল তার এত বিশাল ডাটা নিয়ে কিভাবে এত নিখুঁতভাবে আমাদের যথোপযুক্ত ফলাফল দেখায়?
গুগলের সার্ভারে প্রতিদিন প্রায় বিলিয়ন নতুন সাইট সংযোজিত হচ্ছে। এই সাইট গুলো সঠিকভাবে পর্যবেক্ষন করে তা বিন্যস্ত করতে হয়। গুগল এই কাজটির জন্য অসংখ্য Crawler/bot তৈরী করে রেখেছে। এসকল Crawler অটোমেটিক রোবটের মতই। এই Crawler এর প্রধান কাজ হলো, গুগলের সার্ভারে যে সকল নতুন সাইট যুক্ত হচ্ছে বা পূর্বের সাইটেই নতুন কিছু আপডেট করা হলে, তাদের প্রোগ্রামিং, কন্টেন্ট এ্যানালাইসিস করা।
আপনার সাইট বিল্ড আপের সময় প্রোগ্রামিং করে আপনি সাইটের যেই অংশে গুগল ক্রলারের ক্রল করার পারমিশন দিবেন, গুগল কেবল সেই অংশ ক্রল করতে পারে। গুগল ক্রলার আপনার সাইটটিকে সম্পূর্ণভাবে খুটিনাটি বুঝে তার সার্চ পেইজে রেখে আসবে।
গুগলের সার্ভারে ক্রলিং এর পর অসংখ্য সাইট সংরক্ষিত হয়। এ সংরক্ষিত সাইটগুলোকেই সার্চারের প্রয়োজনমত গুগল রেজাল্ট পেইজে শো করে। খুব দ্রুত সঠিক ফলাফল দেখাতে গুগলকে সাইট ক্রলিং এর পর আরো একটি কাজ করতে হয়৷ তা হলো indexing. Indexing বলতে আমরা বুঝি কিছু বিষয়ের সূচীপত্র তৈরী করা। গুগল এর ক্রলারগুলো সাইটের ধরন অন্যযায়ী সন্নিবেশ করে থাকে। এতে করে খুবই দ্রুততার সাথে গুগল সম্পৃক্ত সাইটগুলোকে রেজাল্ট পেইজে দেখাতে পারে।
একটি লাইব্রেরির কথা যদি চিন্তা করি, লাইব্রেরিতে অসংখ্য বই থাকে। বইগুলো যদি এলোমেলো ভাবেই তাকে রেখে দেয়া হতো, তাহলে পাঠকের কাঙ্খিত বইটি খুজে পেতে অনেক সমস্যা হতো এবং অনেক সময়ের ব্যাপার হতো। একারণে লাইব্রেরিতে বিভিন্ন শাখার জন্য আলাদা আলাদা তাকের ব্যবস্থা থাকে এবং তাকগুলোতে শাখা অনুযায়ী বই সাজিয়ে রাখা হয়। ঠিক একইভাবে গুগলের ক্রলার গুগলের সার্ভারে জমা থাকা সাইটগুলোকে খুব সূক্ষ্মভাবে সজ্জিত করে থাকে যাকে আমরা indexing বলছি।
সার্চ ইঞ্জিনে একটি বিষয়ে সার্চ করলে গুগল রেজাল্ট পেইজে কতগুলো সাইটকে সাজেস্ট করে থাকে। এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, প্রথমে থাকা সাইটটিকে কেন প্রথমে রাখা হয়েছে বা চতুর্থ অবস্থানের সাইটটি কেনইবা চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। গুগলের ইনডেক্স করা সাইটগুলো থেকে কিছু বিষয় বিবেচনা করে গুগল মূলত বিভিন্ন সাইটকে র্যাংক করে থাকে।
গুগলের র্যাংকিং ফ্যাক্টর প্রায় ২০০ টির মতো।
Google’s 200 Ranking Factors: The Complete List (2020)
তবে সংক্ষেপে গুগলের র্যাংকিং ফ্যাক্টরকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।
১. কন্টেন্ট
২. ব্যাকলিংক
৩. র্যাংক ব্রেইন
যে সাইটের কন্টেন্ট ফ্রেশ, ব্যতিক্রম, ভিজিটরদের বোঝার উপযোগী, বিষয়বস্তুর সাথে সম্পর্কিত হলে তা গুগলের কাছে অনেক বেশি গ্রহনযোগ্যতা পায়। কন্টেন্ট এর মান ভালো হলে সাইট খুব দ্রুত র্যাংকিং এ এগিয়ে যায়।
ব্যাকলিংক সংক্ষেপে আপনার সাইটটির প্রচারণা করা। অন্যান্য সাইটগুলো যখন আপনার সাইটের লিংক শেয়ার করবে, তখন এটা আপনার জন্য ব্যাকলিংক। প্রাসঙ্গিক সাইট থেকে যত বেশি ব্যাকলিংক নেয়া যায়, গুগল আপনাকে তত গুরুত্ব দিবে এবং আপনার সাইটের রাংকিং বাড়বে।
র্যাংক ব্রেইন বলতে বোঝাচ্ছে গুগল ক্রলারের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সি বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। গুগল ক্রলার আপনার সাইট ক্রলিং করার সময় অনেকগুলো ফ্যাক্টর খেয়াল করে। আপনার কন্টেন্টের শিরোনামে মূল কিওয়ার্ড আছে কিনা, আপনার পার্মালিংকে আপনার মূল কিওয়ার্ড আছে কিনা, আপনার কন্টেন্টে প্রাসঙ্গিক বিষয় তুলে ধরেছেন কিনা। এছাড়াও আপনার কন্টেন্টের শব্দ, বাক্য ব্যবহারে পাঠকের বোধগম্যতা, কন্টেন্টের বাক্যগুলোর ধারাবাহিকতা, অপ্রাসঙ্গিকতা ইত্যাদি দিকও ক্রলার এখন নিজেই বুঝতে পারে। এমনকি আপনার সাইটে একজন ট্রাফিক কত সময় থাকছে, তার আপনার সাইটের প্রতি ইম্প্রেশন কিরকম পড়ছে এই বিষয়গুলোও ক্রলার বুঝতে পারে।
এসকল সার্বিকদিক বিবেচনা করে গুগল আমাদের একটি যথার্থ রেজাল্ট শো করে থাকে।